ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি শনিবার, ২০২৫ || ৫ মাঘ ১৪৩১
good-food
৫৯২

৭১তম বর্ষে পা রাখল আ`লীগ  

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:১২ ২৩ জুন ২০১৯  

উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আজ (২৩ জুন) রোববার ৭১তম বর্ষে পা রাখল। এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, সেমিনার, র‌্যালি, আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে  কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন এ দলটি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে রয়েছে আজ সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন। বেলুন ও পায়রা অবমুক্ত। সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে  বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা ও তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের সম্মাননা দেয়া হবে। ২৫ জুন মঙ্গলবার দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরবর্তীতে হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণিকা, ক্রোড়পত্র এবং পোস্টার প্রকাশ করেছে দলটি। রাজধানীসহ সারাদেশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশের জেলা, উপজেলা, মহানগরে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, স্মরণিকা প্রকাশ এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের জন্ম মোটেও সুখকর ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে, বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার আশঙ্কা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কারিগররা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দুই দিন আগে তাকে রোজ গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়। ভাসানীকে বোরখা পরিয়ে (মতান্তরে কম্বল জড়িয়ে) ঘোড়া গাড়িতে করে রোজ গার্ডেনে নিয়ে আসেন সংগঠনটি দাঁড় করানোর অনুঘটক শওকত আলী।

জন্মলগ্নে এ দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। শুরু থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার প্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়।

১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অব্যাহত রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার তরুণ সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে কারান্তরালে থেকেও ভাষা আন্দোলনে পালন করেন প্রেরণাদাতার ভূমিকা। ভাষা আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত করে এক মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ।

আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয় জাতীয় ছুটির দিন ‘শহীদ দিবস’। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় সংগঠন গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

এরপর আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, '৬২ ও '৬৪-র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৬-র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, '৬৮-র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৬ দফাভিত্তিক ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত, ঠিক তখনই স্বাধীনতা বিরোধীচক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব উদ্যমে সংগঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের এক নবতর সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’।